ভাইরাস ট্যাঙ্ক!

প্রচারেই প্রসার। আসলেই, যারা মার্কেটিং-এ কাজ করেন তাদের যুগ যুগ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সারগর্ভ প্রতিফলন দুই শব্দের একটি সম্পূর্ণ অর্থপ্রকাশ করা বাক্য ‘প্রচারেই প্রসার‘।

২০২০ সাল। জানুয়ারী থেকেই উনি আসছেন। তিনি যে আসছেন, তাঁর আপ্যায়ন তথা মোকাবেলায় আমরা কতটা প্রস্তুত সেই বক্তব্য নিয়ে আমাদের মূলধারার প্রচার মাধ্যমগুলো প্রতিরাতেই টকশো করতে থাকলো। উনি যখন চলে আসলেন, তখন আমরা কি করতে পারতাম, কতটা পারিনাই, কেনো পারলাম না সে নিয়ে টকশো তো আর থামে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা, সুস্থ্য লোকের সংখ্যা জানিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ব্রিফিং দিতে থাকলো। আমরা যারা আমজনতা, তারাও উৎসুক হয়ে টিভির নিচের স্ক্রলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকি সর্বশেষ আপডেট জানার জন্য।আজ যখন মে মাসের শেষে এই লেখাটা লিখছি তখন মনে হয় এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা আমাদের আলোচ্য উনিটা কে। আমার ধারণা, ১০ বছরের একটি বাচ্চাও বলে দিতে পারবে আমি এতক্ষন কার গুনকীর্তন করলাম। ২০২০ সালে আমার আলোচ্য উনার  অর্থাৎ করোনা সাহেবের প্রচার ভাগ্যে একেবারে একাদশে বৃহস্পতি। এখন পত্রিকায় করোনা পাতা, ফেসবুকে করোনা আপডেট, টিভিতে করোনা সংবাদ প্রচার একটা নিয়মিত ঘটনা। 

প্রসার এতো বেশি হয়েছে যে, এখন রাস্তায় মোড়ে মোড়ে ব্লিচিং পাউডার, স্যানিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদির ফুটপাত দোকান। মাস্ক ছাড়া কাউকে রাস্তায় পাওয়া দুস্কর। কোনো দোকানে ঢুকে বাজার করা যায়না। সুপার শপ থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে জ্বর মেপে দোকানে ঢুকায়। 

প্রচার ভাগ্য বিবেচনায় আমাদের ভাইরাস ট্যাঙ্ক এর একেবারেই ফাটা কপাল । সে বেচারা বছরের পর বছর একেবারে নীরবে কতশত ছোঁয়াছে রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে, কেউ তাকে প্রচারের আলোয় আনাতো দূরের কথা, মনেই করেনা যে সে কোনো ক্ষতি করতে পারে। ফুটপাতের টোকাই থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ভদ্রলোক পর্যন্ত অবলীলায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে নিজের অজান্তেই কতশত ভাইরাস ট্যাঙ্ক বসিয়ে চলে যাচ্ছেন। আমাদের যাঁরা নিজেদেরকে সচেতন বলে দাবি করেন তাঁরা কি কেউ একবারও ভেবে দেখেছেন?

হ্যাঁ। আমরা বলছি থুথু’র কথা। হাঁচি বা কাশির চেয়ে থুথু অনেক বেশি বিপদের কারণ হতে পারে। থুথু শুকিয়ে ডাস্টে পরিণত হয়ে ভাইরাস অনেক দিন টিকে থাকতে পারে। থুথু বা কফ থেকে পানির মাধ্যমে ভয়াবহভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সবার সতর্ক হওয়া দরকার। প্রত্যেকের নিজের অজান্তে ফেলে দেয়া থুথু একেকটা ভাইরাস ট্যাঙ্ক এ রূপান্তরিত হচ্ছে।। এই ভাইরাস ট্যাঙ্ক থেকে প্রতিদিন যত ভাইরাস ছড়ায় করোনা কেবলমাত্র তাদের একটি। অন্যভাবে বললে, যতগুলো মাধ্যমে করোনা ছড়ায় তার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ছড়ানোর একমাত্র মাধ্যম হলো থুথু। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে হয়তো আমাদেরকে করোনার চাইতে ভয়াবহ নতুন কোনো ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।   

এছাড়াও আমাদের কথিত এই ভাইরাস ট্যাঙ্ক থেকে শুধুমাত্র ভাইরাসই ছড়ায় না, এখান থেকে উপজাত হিসেবে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন প্রকারের ছোট বড় ব্যাকটেরিয়া। ভুলে গেলে চলবে না, একসময় বলা হতো, যার হয় যক্ষা, তার নাই রক্ষা। অথচ এই যক্ষা ছড়ানোর মূল মাধ্যম হচ্ছে থুথু বা কফ।

OHDIR Foundation বিগত বছরগুলোতে অনেক থুথু বিরোধী প্রচারাভিযান করেছে। কিন্তু প্রচারাভিযানগুলো এলাকাভিত্তিক সীমাবদ্ধই থেকে গেছে। কেননা, OHDIR Foundation এর প্রচুর পরিমান ফান্ড নেই, সবগুলো টিভি চ্যানেলে একসাথে থুথুবিরোধী প্রচারাভিযানের খবরটাও প্রচারিত/ প্রকাশিত হয় না। 

তারপরেও আমরা আমাদের মতো বলে যাইদয়া  করে যেখানে সেখানে থুথু ফেলে আর নতুন ‘ভাইরাস ট্যাঙ্ক’ বসাবেন না। আসুন অভ্যাস পাল্টাই, সবাই মিলে বাঁচি 

Related posts

Leave a Comment